শিরোনাম
Yasin Hoque | ০৮:৩১ এএম, ২০২০-০৪-০৭
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বন্ধ হয়ে পড়েছে দেশের উন্নয়ন সহযোগী পরিবহন খাত। দেশের বাজার অর্থনীতি ও পরিবহনের চাকা যারা সচল রাখেন সেই ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, কার্গো ও পিকআপ ভ্যানের ৫৭ হাজার চালকের জীবনে নেমে এসেছে ভয়াবহ দুর্দিন।
রোববার সরেজমিন রাজধানীর তেজগাঁওয়ে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ট্রাকস্ট্যান্ডে বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়নের প্রধান কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা গেল, শত শত ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান পড়ে আছে। চালকদের সতেজ মুখ শুকিয়ে গেছে। তাদের অনেকে সেখানেই থাকছেন এবং অল্প অল্প টাকা চাঁদা দিয়ে চাল-ডাল কিনে খিচুড়ি রান্না করে খাচ্ছেন।
ঢাকাসহ সারাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন এই ইউনিয়নভুক্ত চালকরা। গাড়ি চালিয়ে পণ্য পরিবহন করে দৈনিক আয় থেকে চলত তাদের জীবন। এখন সেই আয় বন্ধ হয়ে গেছে। জীবন ও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়নের সভাপতি তালুকদার মো. মনির বলেন, 'শুধু চালক নয়- সংগঠনের কোনো কোনো নেতার অবস্থাও খুব করুণ। না খেয়ে থাকছেন অনেকে। 'না পারেন কইতে, না পারেন সইতে'- এমন অবস্থা তাদের। চালকদের দুর্দিনে সহায়তা করার জন্য সংগঠনের নিজস্ব কোনো তহবিল নেই। সরকারও সহায়তার পদক্ষেপ নেয়নি এখনও। এ পরিস্থিতিতে কোনো সহায়তা না পাওয়া গেলে পরিণতি কী হবে, তা আল্লাহ জানেন।'
তিনি বলেন, 'ট্রাক, কাভার্ডভ্যান চালকদের বিদ্যমান সংকট দূর করতে সরকারি সহায়তা খুবই জরুরি। পরিস্থিতি এত খারাপ, অথচ স্থানীয় জনপ্রতিনিধির দেখা মিলছে না। এই মুহূর্তে সরকারি সহায়তা না পাওয়া গেলে চালকরা এই পেশায় থাকতে পারবেন না। এতে পরিবহন শিল্প ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, দক্ষ চালকের শূন্যতা দেখা দিতে পারে।
ট্রাকস্ট্যান্ডে অবস্থানরত চালকরা জানান, যারা সরকারি বা বেসরকারি চাকরি করেন, তারা বেতন পাবেন। কিন্তু গাড়ির চাকা না ঘুরলে তাদের তো পেটই চলে না। মার্চ মাস শেষ, বাসার মালিকরা ভাড়ার জন্য হাতে স্লিপ ধরিয়ে দিয়েছেন- কিন্তু তারা ভাড়া দিতে পারছেন না। সারাদেশের মোট ৫৭ হাজার চালকের মধ্যে ঢাকাতেই কমবেশি ২০ হাজার চালক অবস্থান করেন।
বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, চালকদের এখন ভয়ানক দুর্দিন চলছে। সরকারিভাবে বেশ আগে শ্রমিকদের জন্য একটি ফান্ড গঠন করা হয়েছিল। সেই তহবিল থেকে কখনও শ্রমিকদের সহায়তা করা হয়নি। এই দুর্দিনে ওই ফান্ড থেকে শ্রমিকদের সহায়তা করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান মিজান বলেন, তারা উন্নয়নের সহযোগী। পরিবহন শিল্পের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। আমদানি-রপ্তানির মালামাল তারাই পরিবহন করেন। কিন্তু এই দুর্দিনে তাদের পাশে কেউ নেই। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজেও পরিবহন খাতের কথা নেই। তাদের অনেকে বড় বড় কোম্পানি থেকে কিস্তিতে গাড়ি কিনেছেন। কিস্তির টাকা কীভাবে পরিশোধ করা হবে- তা নিয়ে চিন্তিত তারা।
চালক মিজানুর রহমান বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে গাড়ি চালাতাম। গাড়ি চলাচল বন্ধ, আয়ও বন্ধ। খুবই দুরবস্থায় আছি। সরকারি-বেসরকারি কোনো সংস্থাই টাকা-পয়সা বা খাদ্যসামগ্রী দিচ্ছে না।
ট্রান্সপোর্ট মালিক সোবহান ভূঁইয়া বলেন, এই পরিবহন খাতই সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে। অথচ সরকারের অর্থনৈতিক প্যাকেজে পরিবহন খাতের উল্লেখ নেই। ৯৫ শতাংশ গাড়ি বিভিন্ন কোম্পানি থেকে কিস্তিতে কেনা হয়েছে। অথচ সরকারের প্যাকেজে ঋণের কিস্তির বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2019 - 2024 PassengerVoice | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ
Developed By Muktodhara Technology Limited.
পাবলিক মতামত